জাগো তবে অরণ্য কন্যারা

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কবিতা | | NCTB BOOK

মৌসুমি ফুলের গান মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর

চারিদিকে শুনি হাহাকার ।

ফুলের ফসল নেই, নেই কারও কণ্ঠে আর গান

ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ স্নান ।

 

মাটি অরণ্যের পানে চায়

সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা। জাগো আজি,

মর্মরে মর্মরে ওঠে বাজি

বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা

মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বালা!

কঙ্কণে তুলিয়া ছন্দ তান

জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ

ফুলের ফসল আনো, খাদ্য আনো ক্ষুধার্তের লাগি

আত্মার আনন্দ আনো, আনো যারা রহিয়াছে জাগি

তিমির প্রহর ভরি অতন্দ্র নয়ন, তার তরে

ছড়াও প্রভাত আলো তোমাদের মুঠি ভরে ভরে।

Content added || updated By

শব্দার্থ ও টীকা

ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি — প্রকৃতিতে ফুল ও ফসলের সম্ভার কমে যাওয়ায় মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ ভীত।

ম্লান — মলিন।

ক্ষরিছে — চুয়ে চুয়ে পড়ছে।

পল্লব — গাছের নতুন পাতা। ডালের নতুন পাতাযুক্ত আগা। সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের

নিবিড় ছায়ায়  — মাটির মমতা রস পেয়ে বৃক্ষ শাখায় নতুন পাতা গজিয়েছে।

জাগো তবে অরণ্য কন্যারা  কবি বৃক্ষ — কন্যাদের জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন প্রকৃতিকে আবার শ্যামল সবুজে ফলে-ফুলে ভরিয়ে তোলার জন্যে।

বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা — মানুষ প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ করায় বন উজাড় হচ্ছে। বৃক্ষনিধন বাড়ছে। বৃক্ষের বুকে তাই যন্ত্রণার আগুন। মেলি লেলিহান শিখা  কবি তরু কন্যাকে আহ্বান জানাচ্ছেন তার শাখায় শাখায় আগুন রঙা ফুল ফুটিয়ে আকাশে শাখা বিস্তার করতে।

কঙ্কণ — কাঁকন, নারীর হাতের অলঙ্কার বিশেষ।

মুমূর্ষু  — মৃতপ্রায়। মরণাপন্ন। মরে যাচ্ছে এমন।

ধরা-প্রাণ — পৃথিবীর জীবন।

অতন্দ্র — তন্দ্রাহীন। ঘুমহীন। নির্ঘুম। নিদ্রাহীন।

নয়ন — চোখ।

Content added || updated By

পাঠের উদ্দেশ্য

এ কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতি জগতের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে আগ্রহী হবে এবং প্রকৃতির ঐশ্বর্য রক্ষায় সচেতন হবে।

Content added By

পাঠ-পরিচিতি

‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতাটি সুফিয়া কামালের ‘উদাত্ত পৃথিবী' কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। প্রকৃতির রূপ-সচেতন কবি চারপাশের অরণ্য-নিধন লক্ষ্য করে ব্যথিত। তাই মৌসুমি ফুলের গান আর তার কণ্ঠে জাগে না। বরং চারপাশে সবুজ প্রকৃতির বিলীন হওয়া দেখে তাঁর মন হাহাকার করে ওঠে। কবি তাই অরণ্য-কন্যাদের জাগরণ প্রত্যাশা করেন। তিনি চান দিকে দিকে আবার সবুজ বৃক্ষের সমারোহের সৃষ্টি হোক; ফুলে ও ফসলে ভরে উঠুক পৃথিবী; মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা পাক বিপন্নতার হাত থেকে।

Content added || updated By

কবি-পরিচিতি

সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০শে জুন বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদ গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লায়। সে আমলে মেয়েদের লেখাপড়ার মোটেই সুযোগ ছিল না। তিনি নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শিখে ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেছিলেন। কিছুকাল তিনি কলকাতার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সুদীর্ঘকাল ধরে সাহিত্যচর্চা, সমাজসেবা ও নারীকল্যাণমূলক নানা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর কবিতা সহজ, ভাষা সুললিত, ছন্দ ব্যঞ্জনাময়। কবি সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো : 'সাঁঝের মায়া’ ‘মায়া কাজল', 'মোর যাদুদের সমাধি পরে'। তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘একাত্তরের ডাইরি’; শিশুদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘ইতল বিতল' ও ‘নওল কিশোরের দরবারে'। কবি সুফিয়া কামাল তাঁর কবি প্রতিভার জন্য অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন। সেসব হলো : বাংলা একাডেমি পুরস্কার, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, একুশে পদক, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার, মুক্তধারা ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি। তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Content added || updated By

কর্ম-অনুশীলন

ক. প্রকৃতিতে রক্ষার ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি যুক্ত করে পোস্টার তৈরি কর (একক কাজ)। 

খ. বাড়িতে একটি গাছ লাগাও এবং এই ছবি শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শনের ব্যবস্থা কর।

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content

সৃজনশীল প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion